রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৩০ অপরাহ্ন

গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় লাখো মানুষের মিলনমেলা

আল-আমিন মন্ডল, গাবতলী (বগুড়া) প্রতিনিধি:: গতকাল বুধবার ব্যাপক উৎসব মুখোর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। মাছ ও মিষ্টির জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠা এই মেলায় লাখ লাখ মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল। মেলায় রানীরপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী ধলু ও সুক্তো সাকিদার যমুনা নদীর ৬৬ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ মেলায় নিয়ে এসেছেন। এই বাঘাইড়টি কেটে বিক্রি করছেন ১২’শ টাকা কেজি দরে। আর ৫০/৬০ কেজি ওজনের জীবিত বাঘাইড় মাছ কেটে বিক্রি হচ্ছে ১১’শ থেকে ১২’শ টাকা কেজি দরে।

ক্রেতা কাদের বক্স ইসলাম বলেন, এবার মেলায় মাছের দাম স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। মেলায় আসা (জামাই) খোকা মিয়া একটি বড় রুই মাছ ক্রয় করেছেন। তিনি জানান, পছন্দের মাছ হওয়ায় দামটা একটু বেশীই নিয়েছে। এছাড়াও মেলায় ১৬ কেজি ওজনের বোয়াল মাছের দাম হাকানো হয়েছে প্রতি কেজি ১৩শ টাকা, ১৫ থেকে ১৮ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ১২’শ টাকা কেজি, ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ৮’শ টাকা, ১০ কেজির উপরে আইড় মাছ ১২’শ থেকে ১৪’শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রুই বিক্রি হচ্ছে ৬’শ টাকা কেজি, চিতল ৪’শ টাকা কেজি, পাঙ্গাস ৩’শ টাকা কেজি, ব্রিগেড ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা কেজি, ব্লাডকাপ ৪’শ থেকে ৮’শ টাকা কেজি, ১০ কেজি ওজনের উপরে সিলভার কাপ সাড়ে ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য জাতের মাছও মেলায় উঠেছে। মেলার জন্য ১০ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি তৈরী করেছেন বিশিষ্ট মিষ্টি ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ। মহিষাবান এলাকার ব্যবসায়ী লতিফের দোকানে এ মিষ্টির দাম হাকানো হয়েছে ৩২’শ টাকা।

এছাড়া ১ কেজি, ২ কেজি, ৩ কেজি, ৪ কেজি ওজনের মিষ্টিও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দামে। লতিফের মিষ্টির দোকানে দুই শত মনের বেশী মিষ্টি রয়েছে- যা তিনি মেলার দিনেই বিক্রির জন্য তৈরী করেছেন। ধোঁরা গ্রামের মিষ্টি ব্যবসায়ী বাদশা এবারের পোড়াদহ মেলায় মোট ৮০মন মিষ্টি বিক্রি করেছেন বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান। প্রতিটি দোকানে শত শত মন মিষ্টি বেচা-কেনা হয়েছে। মেলায় মাছ, মিষ্টি, গরুর মাংস, মহিষের মাংস, বড়ই (কুল), কাঠ ও ষ্টীলের ফার্নিচার, কসমেটিক, কৃষিসামগ্রীসহ বিভিন্ন দ্রব্য হাট-বাজারের মতোই ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে চোখে পড়ার মতো। মেলায় প্রায় লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছে।

এছাড়াও গাবতলীর দূর্গাহাটা হাইস্কুল মাঠ, দাঁড়াইল বাজার, পেরীহাটসহ বিভিন্ন বাজারে বাজারে মাছ-মিষ্টির মেলা বসেছিল। উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন পোড়াদহ নামক স্থানে প্রায় ৪’শ বছর পূর্বে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাাসী পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য মেলা বসে। মেলাটি একদিনের হলেও তিনদিন পর্যন্ত চলে। প্রতিবছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়। মেলা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় মেলা প্রাঙ্গন।

এ ব্যাপারে মেলার পরিচালক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। মেলায় মেয়ে-জামাই, আত্মীয় স্বজনসহ লাখো মানুষের পদচারণা মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। মেলায় শিশুদের জন্য বিনোদনমূলক নাগোরদোলা, চরকি এবং মটরসাইকেল খেলা ছিল। গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রওনক জাহান জানান, সকলের সার্বিক সহযোগিতায় মেলাটি অত্যান্ত শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

গাবতলী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এদিকে প্রতিবছরের মতো আজ গাবতলীর মহিষাবান ইউনিয়নের রানীরপাড়া এবং মহিষাবান পশ্চিমপাড়া গ্রামে (ত্রি-মোহনী) অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com